মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালকে নেতৃত্বে কক্সবাজারের টেকনাফে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছিল হিরোইন, ইয়াবা, বিদেশী পিস্তল, তাজা কার্তুজ ও ম্যাগজিন। এ ঘটনায় সংস্থার টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বরে টেকনাফ থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে ৭ জনকে আসামী করে ২টি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে মাদক আইনের মামলাটি তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় সংস্থার টেকনাফ বিশেষ জোনের (উপ-পরিদর্শক) এসআই তুন্ত মনি চাকমাকে। অস্ত্র মামলাটি পুলিশ এখনও তদন্ত করছেন। দেড় মাসের মাথায় গত ১০ নভেম্বর মাদক মামলাটির অভিযোগপত্র (চার্জসিট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। যেখানে এজাহারে অভিযুক্ত ১ এবং ২ নম্বর আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত রবিবার (১০ ডিসেম্বর) কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা দায়েরা ও জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেন। যার সূত্র ধরে আদালত থেকে দাখিল করা অভিযোগ পত্র, এজাহার সহ মামলার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
মামলারটির এজাহারে বলা হয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর্যন্ত টেকনাফ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোদার বিলের মোহাম্মদ সাজেদের ভাড়া করা বসতঘরে এক অভিযান চালানো হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজলের উপস্থিতিতে অভিযানে ৭০০ গ্রাম হিরোইন, ৫৩ হাজার ইয়াবা, ৩ টি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, একটি বিদেশী পিস্তল, ১৪১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, তিনটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও ৭ জন পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যু বিহারী নাথ বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বরে টেকনাফ থানায় ৭ জনকে আসামী করে ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১ নং আসামী টেকনাফ সদর ইউপির গোদার বিলের আবু সৈয়দের ছেলে আবদুল্লাহ, ২নং আসামী একই ইউপির উত্তর লম্বরির হোছন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল কাদের, ৩নং আসামী পশ্চিম গোদারবিলের ইমাম হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদ প্রকাশ শাহেদ, ৪নং আসামী পশ্চিম গোদারবিলের ইমাম হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সালেম প্রকাশ শাহ আলম, ৫নং আসামী দক্ষিন লেঙ্গুরবিলের হোসাইন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সাদেক প্রকাশ সাদ্দাম, ৬নং আসামী দক্ষিন লেঙ্গুর বিলের বশির আহমদের পুত্র আনোয়ার ও ৭নং আসামী গোদার বিলের কালা মিয়ার ছেলে মো. কাসিম। এর মধ্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে টেকনাফ থানায় জিআর মামলা নং-৬৯০, তাং- ২৫.০৯ ২০২৩ইং মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তুপ্ত মনি চাকমা। অপর অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলাটি টেকনাফ থানার এক কর্মকর্তার কাছে তদন্তাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে মাদক আইনের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক তুন্ত মনি চাকমা মামলার ১ নং আসামী আবদুল্লাহ ও ২ নং আসামী মোহাম্মদ আবদুল কাদেরকে বাদ দিয়েই দেড় মাসের মাথায় গত ১০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দাখিল করেন। অভিযোগ উঠেছে কোটি টাকার বিনিময়ে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারী ১ নং আসামী আবদুল্লাহ ও ২ নং আসামী মোহাম্মদ আবদুল কাদেরকে বাদ দিয়েই দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অথচ এরা দুই জনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী বিহারী নাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি মামলার চার্জশীট থেকে দুই আসামীকে বাদ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রকাশ্য দিনের বেলায় ঘরটি থেকে ৭ জন আসামী একে একে সবাই পালাতে দেখা গেছে ষ্পষ্টভাবে। বাদী মামলার এজাহারে তা উল্লেখও করেছেন, কিন্তু এমন কি ঘটনা হল যে তাদের বাদ; দিতে হবে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমি ভাই অন্য এক অপারেশনে রয়েছি। পরে জানাব।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ-পরিদর্শক তুন্ত মনি চাকমা বলেন, আমি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামীর বিষয়ে জানতে পেরেছি যে, তারা ঘটনার সময় অন্যত্র অবস্থান করছিলেন। এমনকি আসামীরাও জানিয়েছেন যে, তারা ওই সময় রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন অভিযুক্তরা ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, এই সংক্রান্ত কাগজ পত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তদুপরি আমি তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি মামলার বাদীকেও জানিয়েছি। অবৈধ লেনদেনের কথা তিনি অস্বীকার করেছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্ত চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল এর মুঠোফোনে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি নয়, বলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পরে ওই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্বিতীয় দফা ফোন রিসিভ করেননি।